কখনো কি লক্ষ্য করেছেন— আঁটসাঁট জিন্স পরে বেশি হাঁটা বা বসে থাকার পর হঠাৎ উরুর বাইরের দিকে একধরনের ঝিনঝিন, জ্বালা বা অসাড়তা অনুভব হচ্ছে? অনেকে ভেবেছেন হয়তো হাড়ের সমস্যা, কেউ আবার ভেবেছেন স্রেফ ‘পেশি টান’। কিন্তু এর আসল কারণ হতে পারে এক বিশেষ স্নায়ুর চাপ, যার নাম মেরালজিয়া প্যারেস্থেটিকা (Meralgia Paresthetica)। ডাক্তাররা একে আবার বার্নহার্ড-রথ সিনড্রোম নামেও চেনেন।
Photo by Marcel Strauß on Unsplash
কীভাবে হয় এই সমস্যা?
আমাদের শরীরের ল্যাটারাল ফিমোরাল কিউটেনিয়াস নার্ভ (LFCN) নামের এক স্নায়ু কোমর থেকে বেরিয়ে উরুর বাইরের অংশে গিয়ে মিশে। যখন এই স্নায়ুটি ইনগুইনাল লিগামেন্টের কাছে চাপা পড়ে, তখনই দেখা দেয় সমস্যার সূত্রপাত।
আঁটসাঁট পোশাক, ভারী বেল্ট, গর্ভাবস্থা, অতিরিক্ত ওজন, এমনকি দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা— সবই এর পেছনে দায়ী হতে পারে। তাই একে অনেকে মজা করে বলেন “স্কিনি প্যান্টস সিনড্রোম” বা “বিকিনি ব্রিফ সিনড্রোম”।
লক্ষণ যেগুলো খেয়াল করবেন
- উরুর বাইরের দিকে অসাড়তা বা ঝিনঝিন
- সুঁই ফোটানোর মতো অনুভূতি
- চামড়া স্পর্শে অস্বাভাবিক সংবেদনশীলতা
- মাঝে মাঝে জ্বলন বা চুলকানি
মজার ব্যাপার হলো, এই স্নায়ুর কোনো মোটর ফাংশন নেই— তাই হাত-পা নড়াচড়ায় প্রভাব ফেলে না, কেবল সংবেদনশীলতা নষ্ট হয়।
কে কে বেশি ঝুঁকিতে?
- যাদের স্থূলতা (BMI 30 বা তার বেশি)
- গর্ভবতী মা
- যারা নিয়মিত আঁটসাঁট জিন্স বা ভারী বেল্ট পরেন
- ডায়াবেটিস রোগী
- যারা হিপ বা স্পাইন সার্জারি করিয়েছেন
অর্থাৎ আধুনিক লাইফস্টাইল এই সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ।
কীভাবে ধরা পড়ে এই অসুখ?
ডাক্তাররা সাধারণত রোগীর উপসর্গ শুনে ও কিছু সহজ শারীরিক টেস্টের মাধ্যমেই নির্ণয় করতে পারেন। যেমন—
- পেলভিক কম্প্রেশন টেস্ট – কোমরে চাপ দিলে যদি আরাম লাগে, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি MP।
- টিনেল’স সাইন – স্নায়ুর জায়গায় হালকা টোকা দিলেই ব্যথা বা ঝিনঝিন বাড়ে।
- ইলেক্ট্রোডায়াগনস্টিক টেস্ট – নার্ভ কন্ডাকশন স্টাডি করে নিশ্চিত হওয়া যায়।
- আল্ট্রাসাউন্ড বা এমআরআই – সরাসরি স্নায়ুর পরিবর্তন দেখা যায়।
চিকিৎসার উপায়
ভয়ের কিছু নেই— অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অস্ত্রোপচার দরকার হয় না।
- রক্ষণশীল চিকিৎসা
- আঁটসাঁট পোশাক এড়িয়ে চলা
- ওজন কমানো
- এনএসএআইডি, লিডোকেন প্যাচ বা গ্যাবাপেন্টিনের মতো ওষুধ
- ফিজিওথেরাপি, স্ট্রেচিং, নার্ভ মোবিলাইজেশন এক্সারসাইজ
- ইন্টারভেনশনাল চিকিৎসা
- আল্ট্রাসাউন্ড-গাইডেড নার্ভ ব্লক
- কর্টিকোস্টেরয়েড ইনজেকশন
- রেডিওফ্রিকোয়েন্সি থেরাপি
- সার্জারি (শেষ বিকল্প)
- নার্ভ ডিকম্প্রেশন বা নিউরেকটমি – গুরুতর এবং দীর্ঘস্থায়ী কেসে প্রয়োগ করা হয়।
চিকিৎসা না করলে কী হতে পারে?
ভালো খবর হলো, প্রায় ৮৫% রোগী শুধুমাত্র রক্ষণশীল চিকিৎসাতেই সেরে ওঠেন। অনেকে চিকিৎসা ছাড়াই ২ বছরের মধ্যে সুস্থ হয়ে যান। তবে চিকিৎসা না করলে ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, যা দৈনন্দিন জীবনকে অসহ্য করে তুলতে পারে।
