চণ্ডীগড়, ১৭ সেপ্টেম্বর – স্মৃতি মান্ধানার ব্যাটে রচিত হলো এক সোনালি অধ্যায়। নতুন চণ্ডীগড়ের মহারাজা যাদবিন্দ্র সিং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারতের মহিলা দল দেখিয়ে দিল যে অস্ট্রেলিয়ার মতো প্রতিপক্ষকেও হারানোর সাহস ও সামর্থ্য এখন তাদের রয়েছে। এক শতক-স্মরণীয় পারফরম্যান্সে ভর করে ভারত ১০২ রানে পরাজিত করল অস্ট্রেলিয়া নারী দলকে—ওয়ানডে ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বড় রানের ব্যবধানের হার।
এই জয়ের মাধ্যমে ভারত সিরিজে ১-১ সমতা ফিরিয়ে আনল এবং একই সঙ্গে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১৮ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটাল। ২০০৭ সালের পর এই প্রথমবার ভারতের মাটিতে অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারল ‘Women in Blue’।
টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় অস্ট্রেলিয়া, কিন্তু শুরু থেকেই বোঝা যায় এ দিন মান্ধানার। বাঁ-হাতি ওপেনার শুরু থেকেই সাবলীল, আত্মবিশ্বাসী এবং আগ্রাসী। মাত্র ৭১ বলে ক্যারিয়ারের ১২তম ওয়ানডে শতক তুলে নেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৯১ বলে ১১৭ রানের এক অনবদ্য ইনিংস খেলেন, যেখানে ছিল ১৪টি চার ও ৪টি ছক্কার সমাহার।
ভারতের ইনিংসে পরবর্তী সেরা স্কোর ছিল মাত্র ৪ রান—দীপ্তি শর্মার। বাকিরা এসে-যাওয়ার মধ্যেই ছিলেন। তবে মান্ধানার ইনিংস এতটাই দৃঢ় ভিত্তি গড়ে দেয় যে শেষ পর্যন্ত ভারত ৪৯.৫ ওভারে অলআউট হয়ে যায় ২৯২ রানে—যা অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের অন্যতম সর্বোচ্চ ওয়ানডে স্কোর।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ডার্সি ব্রাউন ৩টি এবং অ্যাশলে গার্ডনার ২টি উইকেট নিয়ে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেও ভারতের ব্যাটিং আগুনে সেদিন কার্যত কেউই দাঁড়াতে পারেননি।
২৯৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া শুরুতেই বিপর্যস্ত হয়। ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফেরা রেনুকা ঠাকুর ম্যাচের পঞ্চম বলেই জর্জিয়া ভলকে শূন্য রানে ফিরিয়ে দেন। এর কিছুক্ষণ পরেই আউট হন অধিনায়ক অ্যালিসা হিলি—যিনি ১৯ বলে করেন মাত্র ৯ রান। পাওয়ারপ্লে শেষের আগেই অস্ট্রেলিয়ার স্কোর দাঁড়ায় ২ উইকেটে ১২ রান।
এরপর এলিস পেরি (৪৪) ও অ্যানাবেল সাদারল্যান্ড (৪৫) কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন। কিন্তু ভারতীয় স্পিনারদের ঘূর্ণিতে দ্রুতই ভেঙে পড়ে মিডল অর্ডার। দীপ্তি শর্মা ও রাধা যাদবের ধারাবাহিক ও নিখুঁত লাইন-লেংথের সামনে কোনো জবাব খুঁজে পায়নি অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপ।
সর্বশেষ ধাক্কা দেন ক্রান্তি গৌড়। মাত্র দ্বিতীয় ওডিআই খেলতে নামা এই তরুণ স্পিনার ৩টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেন মাত্র ২৮ রানে। তাঁর ঘূর্ণিতে ৪০.৫ ওভারে ১৯০ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।
রানের ব্যবধানে এটি এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় পরাজয়—পূর্ববর্তী রেকর্ড ছিল ১৯৭৩ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের কাছে ৯২ রানের হার। সেই ঐতিহাসিক হারকে ছাপিয়ে ভারতের এই ১০২ রানের জয় এক নতুন অধ্যায় রচনা করল।
এই জয়ে সিরিজ এখন সমতায় (১-১)। তৃতীয় ও শেষ ওডিআই হবে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর, দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে—যেখানে দুই দল মুখোমুখি হবে নির্ণায়ক ম্যাচে।
