Close Menu

    Subscribe to Updates

    Get the latest creative news from FooBar about art, design and business.

    What's Hot

    ‘রান্না বাটি’: সম্পর্কের রেসিপি আর জীবনের ঝোলে দার্শনিক স্বাদ

    মারুতি গাড়ির দাম কমলো, ক্রেতাদের হাতে সুযোগ GST Reform 2.0

    Samsung One UI 8 – রোলআউট শুরু: মাল্টিটাস্কিং থেকে এআই পর্যন্ত বড় বদল

    Facebook X (Twitter) Instagram
    • Lifestyle
    • Celebrities
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest Vimeo
    Kolkata.net
    • শুরু
    • লাইফ স্টাইল

      মারুতি গাড়ির দাম কমলো, ক্রেতাদের হাতে সুযোগ GST Reform 2.0

      September 21, 2025

      Samsung One UI 8 – রোলআউট শুরু: মাল্টিটাস্কিং থেকে এআই পর্যন্ত বড় বদল

      September 21, 2025

      Flipkart Big Billion Days 2025 আপনার স্বপ্নের iPhone16, Price হাতের নাগালে?

      September 21, 2025

      কামসূত্র থেকে কাস্টমস: ভারতে প্লেজার ওয়্যার ও তার আইনি যাত্রা

      September 14, 2025

      রঙতত্ত্ব ও রাশিচক্র: রঙের শক্তি কিভাবে প্রভাব ফেলে আপনার জীবনে

      September 14, 2025
    • খেলা
    • সময় চারণ
    • বিনিয়োগ
    • বিনোদন
    • আরও
      • সাহিত্য
      • স্বাস্থ্য
      • ট্রেন্ডিং
      • বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি
      • ভ্রমণ
    Subscribe
    Kolkata.net
    বিনোদন

    নীরবতার ভাষা : প্যান্টোমাইমের ইতিহাস ও ভারতীয় প্রেক্ষাপট

    kolkata netBy kolkata netSeptember 19, 2025No Comments9 Mins Read
    Facebook Twitter Pinterest Telegram LinkedIn Tumblr Email Reddit
    panto mime
    Photo by Louie Castro-Garcia on Unsplash
    Share
    Facebook Twitter LinkedIn Pinterest WhatsApp Email

    মানুষের মুখ খুলে বলা শব্দই কি কেবল যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম? নীরবতাও কি ভাষা হতে পারে? আমরা যখন চোখের ইশারায় কাউকে সতর্ক করি, কিংবা ঠোঁটে আঙুল চেপে নিস্তব্ধতা চাই, তখন তো আমরা কোনো শব্দ ব্যবহার করি না। অথচ বার্তাটি পরিষ্কারভাবে পৌঁছে যায়। নীরবতার এই শক্তিই একদিন শিল্পরূপে পরিণত হয়েছিল—যার নাম প্যান্টোমাইম। শব্দহীন মঞ্চাভিনয়ের এই রূপ মানবসভ্যতার ইতিহাসে যেমন পুরনো, তেমনি এর প্রাসঙ্গিকতা আজও অটুট।

    প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের মঞ্চে যখন অভিনেতারা কোনো সংলাপ ছাড়াই নৃত্যভঙ্গি ও অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে দর্শককে গল্প শোনাতেন, তখনই প্যান্টোমাইমের বীজ রোপিত হয়। “পান্টোস” মানে “সব” আর “মাইমোস” মানে “অনুকারক”—দুটো শব্দের মিলনেই সৃষ্টি “প্যান্টোমাইম”। অর্থাৎ অভিনয়ের এমন এক রূপ, যা সমস্ত আবেগ, সমস্ত পরিস্থিতিকে কেবল দেহভঙ্গির মাধ্যমে উপস্থাপন করতে পারে। রোমান মঞ্চে এই অভিনয় ভিন্ন মাত্রা পেয়েছিল; রাজনীতি, পৌরাণিক কাহিনি কিংবা দৈনন্দিন জীবনের ব্যঙ্গচিত্র—সবই উঠে আসত মঞ্চে। এ এক এমন শিল্প, যা ভাষার সীমা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক হয়ে উঠতে পারত, কারণ নীরবতার ভাষা সবার কাছে সমানভাবে বোধগম্য।

    কিন্তু সময় বদলালো। রোমান সাম্রাজ্যের পতনের সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপের অঙ্গন থেকে ম্লান হয়ে গেল এই নীরব শিল্প। বহু শতক পরে, ইংল্যান্ডে “হার্লেকুইনেড” নামক নাট্যরূপে নতুন করে জাগল এর আলো। মুখোশ, বর্ণিল পোশাক, অতিরঞ্জিত অঙ্গভঙ্গি—সব মিলিয়ে এটি ছিল এক ধরনের রঙ্গব্যঞ্জনা, যা সাধারণ মানুষের বিনোদনের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠল। আবার ফ্রান্সে জনক কোরোল্লি আর পরে মার্সেল মার্সো এই শিল্পকে আন্তর্জাতিক মানচিত্রে নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করলেন। ফরাসি রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে আধুনিক মঞ্চ পর্যন্ত, নীরব অভিনয়ের সেই কল্পনার জগৎ দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে গেল। মার্সো তো প্রমাণ করে দিলেন—শব্দ ছাড়াও একজন শিল্পী পৃথিবীর নানা প্রান্তের দর্শকের চোখে জল আনতে বা হাসি ফোটাতে পারেন।

    কিন্তু ভারতবর্ষের মাটি? এখানে কি ছিল না এমন কোনো ঐতিহ্য? আসলে ভারতীয় নাট্যধারা বরাবরই ছিল বহুমাত্রিক। সংস্কৃত নাটকের জনক ভরত মুনি তাঁর নাট্যশাস্ত্রে “অঙ্গিক অভিনয়”-এর যে বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন, সেটি কার্যত প্যান্টোমাইমেরই এক প্রাচীন রূপ। চোখের ভঙ্গি, হাতের মুদ্রা, শরীরের ভঙ্গি—এসব দিয়েই বোঝানো হয় আনন্দ, দুঃখ, ভয় বা ভালোবাসা। নাট্যশাস্ত্রে বর্ণিত নবরস, যেমন হাস্য, করুণ, বীর, রৌদ্র, ভয়ানক, বীভৎস, অদ্ভুত, শান্ত—সবই মূলত এই অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমেই ফুটে ওঠে। এমনকি শাস্ত্রকাররা বলেছিলেন, “যত্ন করে অঙ্গভঙ্গি রপ্ত করো, বাক্য নিজেই তার অনুসরণ করবে।”

    কথক নৃত্যে গল্প বলার ধারা, বা ভরতনাট্যমের সূক্ষ্ম মুদ্রা, কিংবা যাত্রাপালার মুখভঙ্গি—সবই মূলত মাইমের দেহাত্মক ভাষার ধারক। তাই পশ্চিমে যখন প্যান্টোমাইম নতুন আবিষ্কার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে, তখন ভারতবর্ষের শিল্পমঞ্চে এটি বহুকাল ধরেই বেঁচে ছিল ভিন্ন নামে ও ভিন্ন আকারে।

    আধুনিক ভারতের মূকাভিনয়ের রাজধানী হয়ে ওঠে কলকাতা। বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে যখন বাংলা নাট্যমঞ্চে নতুন নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে, তখন এক তরুণ অভিনেতা আবির্ভূত হলেন—যোগেশ দত্ত। নাটক থেকে সিনেমা—সবখানেই তাঁর ঝোঁক ছিল, কিন্তু তিনি আবিষ্কার করলেন, কথাহীন অভিনয়ই তাঁর আসল শক্তি। পশ্চিমবঙ্গের মাইম জগতে তিনি একেবারে পথিকৃৎ।

    যোগেশ দত্ত কলকাতার নানা মঞ্চে একের পর এক মূকাভিনয় পরিবেশন করে বুঝিয়ে দিলেন, ভাষা ছাড়াই দর্শককে হাসানো, কাঁদানো বা ভাবাতে পারা সম্ভব। তাঁর তৈরি চরিত্রগুলো—রাস্তায় হকার, ভিখারি, মদ্যপ, কিংবা প্রেমে ব্যর্থ যুবক—সরাসরি মধ্যবিত্ত বাঙালি জীবনের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। একেবারে নিজের অভিজ্ঞতার মাটি থেকে উঠে আসা বিষয় নিয়ে কাজ করায়, তাঁর মাইম ছিল সত্যিকারের দেশজ ও স্বতন্ত্র।

    যোগেশ দত্ত যেখানে জনমানসে মূকাভিনয়ের জনপ্রিয়তা বাড়ালেন, সেখানে অন্য একজন শিল্পী এই শিল্পকে একাডেমিক মর্যাদায় নিয়ে গেলেন। তিনি নিরঞ্জন গোস্বামী।

    নিরঞ্জন গোস্বামীকে ভারতের আধুনিক মূকাভিনয়ের গুরু বলা হয়। ফরাসি মাইম শিল্পী মার্সেল মারসোর কাছে তিনি প্রশিক্ষণ নেন, পরে দেশে ফিরে এই শিল্পকে কেবল মঞ্চেই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর উদ্যোগে বিশ্বভারতী ও পরে কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে মূকাভিনয়কে নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

    ১৯৯৩ সালে তিনি স্থাপন করেন ইন্ডিয়ান মাইম থিয়েটার এবং পরবর্তী সময়ে ইন্ডিয়ান মাইম ইনস্টিটিউট, যা ভারতের প্রথম পূর্ণাঙ্গ মাইম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখানে নিয়মিত ওয়ার্কশপ, সার্টিফিকেট কোর্স, এমনকি ডিগ্রি কোর্সও চালু করা হয়। গোস্বামী শুধু শিক্ষায় নয়, সরকারি ও বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক মাইম পরিবেশনার মাধ্যমে সামাজিক বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন—যেমন পরিবেশ রক্ষা, মাদকবিরোধী প্রচার, বা ট্রাফিক নিরাপত্তা।

    তাঁর এই অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী (২০০২) ও সংগীত নাটক আকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত করে।

    আজ ভারতের নানা প্রান্তে মূকাভিনয় শেখানোর জন্য প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কলকাতায় ইন্ডিয়ান মাইম ইনস্টিটিউট যেমন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই শিল্পকে শিক্ষা দেয়, তেমনি বেঙ্গালুরু, দিল্লি বা পুণেতে ছোট ছোট অ্যাকাডেমি ও স্বাধীন থিয়েটার গ্রুপ মাইমকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

    রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বভারতী, ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা—এসব প্রতিষ্ঠানেও মাইম শিক্ষার আয়োজন থাকে। নাট্যচর্চার সঙ্গে মাইম যুক্ত হওয়ায় নতুন প্রজন্মের অনেক ছাত্রছাত্রী আজ আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করছে।

    ভারতের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো—সামাজিক বার্তা প্রচারে মাইমের ব্যবহার। নব্বইয়ের দশক থেকে নানা এনজিও ও সামাজিক সংগঠন মাইমকে ব্যবহার করছে সচেতনতার হাতিয়ার হিসেবে। সড়ক দুর্ঘটনা, পরিবেশ রক্ষা, নারী-শিশু সুরক্ষা, দূষণ বিরোধী প্রচার—সবেতেই মাইম ব্যবহার হচ্ছে। কারণ, সংলাপবিহীন এই মাধ্যম প্রত্যন্ত গ্রামে বা বহুভাষিক জনসমাগমে সহজেই পৌঁছে যায়।

    উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক কলকাতার ট্রাফিক পুলিশের প্রচার। একসময় চৌরাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে মাইমশিল্পীরা সিটবেল্ট ব্যবহার, হেলমেট পরা বা মোবাইল ফোনে কথা না বলার বার্তা দিতেন নিঃশব্দ অভিনয়ের মাধ্যমে। কোনো বক্তৃতা নয়, কোনো মাইক নয়—কেবল দেহভঙ্গি দিয়েই পৌঁছে যেত স্পষ্ট বার্তা।

    আজকের দিনে, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও দিল্লি, কেরালা, কর্ণাটক, আসাম—সর্বত্রই ছোট ছোট মাইমদল গড়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক মঞ্চেও ভারতীয় মাইমশিল্পীরা নিজেদের জায়গা করে নিয়েছেন। কলকাতায় প্রতি বছর আয়োজিত মাইম ফেস্টিভ্যাল এখন ভারতীয় নাট্যচর্চার অন্যতম আকর্ষণ।

    আসলে মাইমের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো এর সর্বজনীনতা। ভাষা বা অঞ্চলের বাধা এখানে কার্যকর নয়। বাংলা বা ইংরেজি জানা থাকুক বা না থাকুক, যে কেউ মঞ্চে এক শিল্পীর ভঙ্গি দেখে বুঝতে পারবেন—সে এখন দুঃখিত, না কি আনন্দে আত্মহারা। এ কারণেই বিজ্ঞাপন জগতে, শিশুদের নাটকে কিংবা সামাজিক সচেতনতামূলক প্রচারে মাইম আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।

    তবে মাইমের এক সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। যেহেতু সংলাপ নেই, তাই সব সময় জটিল কাহিনি বর্ণনা করা সম্ভব হয় না। দর্শকের কল্পনাশক্তিকে তীক্ষ্ণভাবে জাগ্রত রাখতে হয়। আবার শিল্পীরও চাই গভীর অনুশীলন; একটিমাত্র ভুল ভঙ্গি বা বাড়তি অঙ্গভঙ্গি পুরো বার্তাকে বিকৃত করে দিতে পারে। তাই একে অনেকে সবচেয়ে কঠিন অভিনয়ের রূপ বলেই মনে করেন।

    কিন্তু এই সীমাবদ্ধতাই একে অনন্য করে তোলে। কারণ কেবলমাত্র দেহভাষা দিয়েই যদি এক শিল্পী হাজার মানুষের হৃদয়ে একই আবেগ জাগাতে পারেন, তবে সেটি নিঃসন্দেহে শিল্পের শিখর ছোঁয়ার নামান্তর। ভারতীয় দর্শনে যেমন বলা হয়—“যা বাচ্য নয়, তা-ই শিল্প”—প্যান্টোমাইম সেই দর্শনেরই বাস্তব রূপ।

    আজকের দিনে যখন শব্দের কলরবে পৃথিবী আচ্ছন্ন, তখন এই নীরব শিল্পের মূল্য আরও বেড়ে যায়। চারপাশের শব্দদূষণ, রাজনৈতিক স্লোগান, সোশ্যাল মিডিয়ার অবিরাম বাকবিস্তার—সব কিছুর মাঝে হঠাৎ যদি আমরা দেখি এক শিল্পী ঠোঁটে আঙুল রেখে কেবল চোখের ভাষায় বলছেন “চুপ”, তবে সেটি অনেক সময় হাজার শব্দের চেয়ে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে।

    এখানেই প্যান্টোমাইম কেবল বিনোদন নয়, এক ধরনের সামাজিক প্রতিরোধও হয়ে ওঠে। দেহভাষার শক্তি দিয়ে অবলীলায় প্রকাশ করা যায় প্রতিবাদের চিৎকার, নিপীড়নের যন্ত্রণা বা স্বাধীনতার স্বপ্ন। যেমন কোনো শিল্পী যদি খাঁচায় বন্দি পাখির ভঙ্গিতে অভিনয় করেন, তবে কোনো সংলাপ ছাড়াই দর্শক বুঝে যাবেন—এটি স্বাধীনতার জন্য মানুষের চিরন্তন আকাঙ্ক্ষা।

    ভারতীয় প্রেক্ষাপটে প্যান্টোমাইম তাই কেবল আমদানি করা শিল্প নয়, বরং আমাদের নিজস্ব নাট্যঐতিহ্যেরই এক বিস্তার। ভরত মুনির নাট্যশাস্ত্র থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক মঞ্চ পর্যন্ত, এই শিল্পরূপ আমাদের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে। শুধু মঞ্চ নয়, শিক্ষা, সামাজিক বার্তা, বিজ্ঞাপন, এমনকি রাজনৈতিক প্রচারণাতেও মাইম ব্যবহৃত হচ্ছে।

    সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হয়তো এর ধারা বদলাবে, নতুন প্রযুক্তি যোগ হবে, আলোর খেলা কিংবা মাল্টিমিডিয়া প্রক্ষেপণের সহায়তায় আরও নতুন আঙ্গিক তৈরি হবে। কিন্তু মূলে যে জিনিসটি অপরিবর্তনীয়, তা হলো নীরবতার এই সার্বজনীন ভাষা। মানবসভ্যতা যতদিন বেঁচে থাকবে, ততদিন দেহভাষার এই শিল্পরূপও বেঁচে থাকবে—শব্দের সীমা ছাড়িয়ে, সংস্কৃতির প্রাচীর ভেঙে, এক মানুষের আবেগ আরেক মানুষের হৃদয়ে পৌঁছে দেওয়ার চিরন্তন সেতু হয়ে।

    ভারতের মাইম ইনস্টিটিউট ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

    যখন মাইমকে কেবল ‘বিনোদন’ থেকে বের করে আনতে হলো, তখন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন দেখা দিল। কলকাতা হয়ে উঠল এর কেন্দ্রস্থল।

    1. ইন্ডিয়ান মাইম থিয়েটার (Indian Mime Theatre) –
      ১৯৭৬ সালে নিরঞ্জন গোস্বামী প্রতিষ্ঠা করেন। এটিই ভারতের প্রথম সংগঠিত মাইম সংস্থা। সারা ভারতে ঘুরে ঘুরে তারা মাইমের প্রদর্শনী করে এবং সামাজিক বার্তা ছড়িয়ে দেয়।
    2. ইন্ডিয়ান মাইম ইনস্টিটিউট (Indian Mime Institute) –
      ১৯৯৩ সালে গোস্বামী এটি চালু করেন। এখানে নিয়মিত সার্টিফিকেট কোর্স, ডিপ্লোমা ও কর্মশালার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পেশাদার প্রশিক্ষণ পান। দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞরাও এখানে পড়াতে আসেন।
    3. ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা (NSD), দিল্লি –
      নাট্যশিক্ষার অংশ হিসেবে এখানে মাইম শেখানো হয়। বহু প্রখ্যাত অভিনেতা এই প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
    4. বিশ্বভারতী, শান্তিনিকেতন –
      নৃত্য-নাট্য শিক্ষার অংশ হিসেবে আঙ্গিক অভিনয় ও মাইম এখানে পড়ানো হয়। রবীন্দ্রনাথের চিন্তাধারা অনুযায়ী দেহভঙ্গি ও মুখাভিনয়ের গুরুত্ব ছাত্রদের শেখানো হয়।
    5. রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা –
      নাট্যচর্চার কোর্সে মাইম বাধ্যতামূলক অধ্যায়। এখানকার ছাত্রছাত্রীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মঞ্চে সাফল্য পেয়েছেন।
    6. বেঙ্গালুরু ও পুণের বিভিন্ন থিয়েটার গ্রুপ –
      মাইমকে সমসাময়িক থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত করে তারা আধুনিক রূপ দিচ্ছে।

    বিশিষ্ট ভারতীয় মাইমশিল্পী

    ভারতের মাইম কেবল যোগেশ দত্ত ও নিরঞ্জন গোস্বামীতেই সীমাবদ্ধ নয়। আরও অনেক শিল্পী ও দল এই শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।

    • যোগেশ দত্ত (১৯৩৫–১৯৯১) – কলকাতার মাইমের জনক। সাধারণ মানুষের চরিত্রকে নীরব অভিনয়ে তুলে ধরে দর্শকের হৃদয় জয় করেছিলেন।
    • নিরঞ্জন গোস্বামী (জন্ম ১৯৪৮) – আধুনিক মাইমকে প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা দেন। মার্সেল মারসোর ছাত্র, পদ্মশ্রী ও সংগীত নাটক আকাদেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত।
    • ভি. কে. শর্মা – কেরলের এই শিল্পী জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত। কেরলের আঙ্গিকভিত্তিক নৃত্যনাট্যকে মাইমের সঙ্গে মেলান।
    • বিজন চক্রবর্তী – মাইমকে শিক্ষাক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে ছিলেন, থিয়েটার শিক্ষায় তাঁর অবদান রয়েছে।
    • বিকাশ রায়চৌধুরী ও সমীর রঞ্জন দে – কলকাতার মাইমচর্চায় তাঁদের অবদান উল্লেখযোগ্য।
    • অভিষেক মাইম গ্রুপ, বেঙ্গালুরু – আধুনিক শহুরে সমস্যাগুলো নিয়ে এক্সপেরিমেন্টাল মাইম উপস্থাপন করে।
    • ট্রান্সপারেন্ট মাস্ক থিয়েটার, দিল্লি – মুখোশ ও মাইম মিশিয়ে নতুন ধারার নাট্যরূপ নিয়ে কাজ করছে।

    ভারতের মাইমের টাইমলাইন

    ➤ খ্রিস্টপূর্ব যুগ

    • নাট্যশাস্ত্র : ভরতমুনি দেহভঙ্গি, আঙ্গিকা অভিনয়, মুখাভিনয়কে অভিনয়ের অন্যতম ভিত্তি হিসেবে স্থির করেন।
    • কুদিয়াট্টম (কেরালা) : ২০০০ বছরের প্রাচীন থিয়েটার ফর্ম, যেখানে অঙ্গভঙ্গির ভাষা শুধু শব্দ নয়, আবেগও প্রকাশ করে।

    ➤ ১৯শ শতাব্দী

    • ব্রিটিশ আমলে পাশ্চাত্য থিয়েটারের প্রভাব আসে। কিন্তু লোকশিল্পে আঙ্গিক অভিনয়ের চর্চা চলতে থাকে।

    ➤ ১৯৩০–১৯৫০

    • কলকাতায় নাট্যআন্দোলনের ভেতরে মূকাভিনয় দেখা যায়। তবে এটি এখনো আলাদা শিল্পরূপ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত নয়।

    ➤ ১৯৫০–১৯৭০

    • যোগেশ দত্ত : কলকাতায় মাইমকে জনপ্রিয় করেন। সাধারণ মানুষের হাসি-কান্না, ট্রাম-বাসের ভিড়, বেকার যুবকের জীবন—সব কিছু তিনি নীরব অভিনয়ে ফুটিয়ে তোলেন।
    • দত্তের দল কলকাতার বাইরে দিল্লি, মুম্বাই, এমনকি বিদেশেও প্রদর্শনী করে।

    ➤ ১৯৭৬

    • নিরঞ্জন গোস্বামী প্রতিষ্ঠা করেন Indian Mime Theatre (IMT)।
    • মাইমকে পেশাদার থিয়েটারের মর্যাদা দিতে শুরু হয় সচেতন আন্দোলন।

    ➤ ১৯৯৩

    • গোস্বামী প্রতিষ্ঠা করেন Indian Mime Institute (IMI)।
    • এখানে নিয়মিত প্রশিক্ষণ কোর্স শুরু হয়। বিদেশি শিল্পীরাও শিক্ষকতা করতে আসেন।

    ➤ ২০০০–২০১০

    • মাইমকে সামাজিক প্রচারণা ও শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যবহার করা শুরু হয়।
    • মাদকবিরোধী প্রচার, ট্রাফিক সচেতনতা, নারীসুরক্ষা—এসব ক্যাম্পেইনে মাইমশিল্পীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

    ➤ ২০১৬

    • প্রতিষ্ঠিত হয় ন্যাশনাল মাইম ইনস্টিটিউট (National Mime Institute)।
    • নাট্যশাস্ত্রভিত্তিক পাঠক্রম অনুযায়ী এক বছরের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা চালু হয়।

    ➤ ২০২০-এর দশক

    • ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নতুন প্রজন্ম মাইমচর্চা শুরু করে।
    • ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, শর্ট ভিডিওর মাধ্যমে কোটি কোটি দর্শকের কাছে মাইম পৌঁছে যায়।
    • থেরাপিউটিক মাইম: বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের মানসিক বিকাশে মাইম ব্যবহার হচ্ছে।

    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Reddit WhatsApp Telegram Email
    Previous Articleআপনার বস কি পেশাগত নার্সিসিস্ট? জানুন ৭টি লক্ষণ
    Next Article বাষ্পের সুরে ধোঁয়ায় জেগে ওঠা এক স্বপ্নযাত্রা
    kolkata net
    • Website
    • Facebook
    • Instagram

    কলকাতার আপন, কলকাতার যাপন

    Related Posts

    ‘রান্না বাটি’: সম্পর্কের রেসিপি আর জীবনের ঝোলে দার্শনিক স্বাদ

    September 22, 2025

    মার্কিন H-1B ভিসা নীতির রূপান্তর: চাপে ভারতীয় প্রযুক্তি খাত ও মধ্যবিত্ত অর্থনীতি | H1b USA visa and HIRE bill

    September 20, 2025

    বিদ্রোহ আর প্রতিশোধের মহাকাব্য: রঘু ডাকাতের চমকপ্রদ ট্রেলর

    September 19, 2025

    Comments are closed.

    Don't Miss
    বিনোদন September 22, 2025

    ‘রান্না বাটি’: সম্পর্কের রেসিপি আর জীবনের ঝোলে দার্শনিক স্বাদ

    বাংলা সিনেমায় পারিবারিক সম্পর্ককে কেন্দ্র করে বহু ছবি তৈরি হয়েছে। তবে প্রতীম ডি. গুপ্ত তাঁর…

    মারুতি গাড়ির দাম কমলো, ক্রেতাদের হাতে সুযোগ GST Reform 2.0

    Samsung One UI 8 – রোলআউট শুরু: মাল্টিটাস্কিং থেকে এআই পর্যন্ত বড় বদল

    Flipkart Big Billion Days 2025 আপনার স্বপ্নের iPhone16, Price হাতের নাগালে?

    Top Posts

    চায়ের জাদু: এক কাপেই ইতিহাস, স্বাস্থ্য আর শিল্পের মেলবন্ধন

    September 14, 2025

    কলকাতার বাবু সংস্কৃতি: বিলাসিতা, ব্যঙ্গ আর বিস্মৃতির ইতিহাস

    September 14, 2025

    টাইট জিন্সের লুকোনো বিপদ: মেরালজিয়া প্যারেস্থেটিকা

    September 14, 2025

    ₹82K থেকে ₹1.3L – iPhone 17 সিরিজে কোনটা ভ্যালু ফর মানি?

    September 14, 2025
    About Us
    About Us

    A lifestyle web magazine for Kolkata and its surroundings with news, stories etc in Bengali language only and more.

    If you want to share you stories with us do write us an email with your stories, images, poems, videos etc
    .
    Email Us: info.kolkatanet@gmail.com

    Facebook X (Twitter) Instagram YouTube
    Our Picks

    ‘রান্না বাটি’: সম্পর্কের রেসিপি আর জীবনের ঝোলে দার্শনিক স্বাদ

    মারুতি গাড়ির দাম কমলো, ক্রেতাদের হাতে সুযোগ GST Reform 2.0

    Samsung One UI 8 – রোলআউট শুরু: মাল্টিটাস্কিং থেকে এআই পর্যন্ত বড় বদল

    আমাদের কথা
    • About Us – আমাদের কথা
    • Advertisement – বিজ্ঞাপন
    • Send your story – আপনার লেখা
    • Privacy Policy
    © 2025 Kolkata.net Designed by Kolkata.net.
    • শুরু
    • লাইফ স্টাইল
    • সময় চারণ

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.