বাংলা সিনেমায় পারিবারিক সম্পর্ককে কেন্দ্র করে বহু ছবি তৈরি হয়েছে। তবে প্রতীম ডি. গুপ্ত তাঁর নতুন প্রজেক্ট ‘রান্না বাটি’–তে বিষয়টিকে অন্য রকম দৃষ্টিকোণ থেকে দেখিয়েছেন। এখানে রান্না শুধু খাবার তৈরির প্রক্রিয়া নয়, বরং সম্পর্কের ভাঙাগড়া, আত্ম-অন্বেষণ আর জীবনের গভীরতর সত্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
টিজারেই ধরা দিল আবেগ আর দর্শনের মিশেল। বাবা-মেয়ের ঠান্ডা সম্পর্ক, হারানো মায়ের স্মৃতি, আর রান্নাঘরের গন্ধ—সব মিলিয়ে দর্শককে টেনে নেয় এক বিশেষ আবহে। ঋত্বিক চক্রবর্তী এখানে এক সিঙ্গল বাবার চরিত্রে, যিনি মেয়ের (মহর) সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রাখতে লড়াই করছেন। অন্যদিকে মহরের কাছে রান্না এক আশ্রয়, এক ধরনের ধ্যান, যা তাকে ফের নিয়ে যায় মায়ের স্মৃতির কাছে।
প্রতীম ডি. গুপ্ত যেভাবে রান্নার মাধ্যমে দার্শনিকতা হাজির করেছেন, তা টিজারের বড় শক্তি। যেমন—“মসলার ঝাঁজে যদি মন অস্থির হয়ে যায়, তবে মাছের ঝোল ঠিক মতো হবে না।” এই সংলাপ শুধু রান্নার ব্যাপার নয়, বরং জীবনেরও রূপক। শান্তি, মনোযোগ আর অনুভব—এগুলোই সুখী সম্পর্ক ও সফল জীবনের আসল উপাদান।
অভিনয়ে ঝলক:
ঋত্বিক চক্রবর্তী তাঁর স্বাভাবিক সংযত অভিনয়ে বাবার ভেতরের দোলাচল তুলে ধরেছেন। সোহিনী সরকার ও সোলাঙ্কি রায় নিজেদের চরিত্রে বাস্তবতা এনেছেন। বরুণ চণ্ডা ও অনির্বাণ চক্রবর্তী ছবিকে আরও সমৃদ্ধ করেছেন। টিজারে ছোট্ট মুহূর্তেই বোঝা যায়, অভিনয়শিল্পীরা চরিত্রে ঢুকে গেছেন।
টেকনিক্যাল দিক:
তূর্য ঘোষের সিনেমাটোগ্রাফি ছবিকে দিয়েছে উষ্ণ রঙের আবহ, যা রান্নাঘরের গন্ধ আর পারিবারিক টানাপোড়েনকে আরও জীবন্ত করেছে। রণজয় ভট্টাচার্যের সুর আর ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর টিজারকে দিয়েছে আবেগঘন মাধুর্য। সংলাপ ভৌমিকের এডিটিং দৃঢ় ও নির্ভুল।
রায়:
টিজার দেখে মনে হয়, ‘রান্না বাটি’ হবে এমন এক ড্রামা যা দর্শককে একসঙ্গে ভাবাবে এবং আবেগী করবে। এখানে থাকবে খাবারের স্বাদ, পরিবারের টানাপোড়েন আর জীবনের দর্শন—যেন এক রেসিপিতে সব উপাদান মিশে যাওয়া।
এই পুজো-পরবর্তী মরশুমে, নভেম্বরের ৭ তারিখে ছবিটি মুক্তি পাবে। আর বাংলা দর্শকরা পেতে পারেন এক অভিনব অভিজ্ঞতা—যেখানে প্রতিটি দৃশ্যই হবে একেকটা রন্ধন-রহস্য, আর প্রতিটি সংলাপ হবে জীবনের মশলা।
